দলের সিনিয়র নেতারা জানান, চিকিৎসা গ্রহণ শেষে বুধবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরার কথা রয়েছে তাদের চেয়ারম্যানের। কিন্তু শারীরিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় তিনি খুব বেশি প্রচারণায় যোগ দিতে পারবেন না।
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে দলের বেশ কয়েকজন মধ্যম সারির নেতা বলেন, এরশাদের অনুপস্থিতিতে তারা এখন বস্তুত অভিভাবকহীন অবস্থায় রয়েছেন। এছাড়া দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, এরশাদের বিশেষ সহকারী রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ সিনিয়র নেতাদের কাছ থেকেও নির্বাচন সম্পর্কে তারা কোনো দিক নির্দেশনা পাচ্ছেন না।
তারা আরও বলেন, নির্বাচনের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতি, দলের মহাসচিব পদ থেকে রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে আবার দলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড বানানো এবং মহাজোটের বাইরেও ১৪৫ প্রার্থীর স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার পেছনের কারণ সম্পর্কে তারা স্পষ্টভাবে কিছু জানেন না।
জাতীয় পার্টির নেতারা বলেন, দলের চেয়ারম্যানের অসুস্থতা সম্পর্কে তাদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেও তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
এর আগে নানা জল্পনা কল্পনা মধ্যে, গত ২৭ নভেম্বর এরশাদকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয় এবং এরপর থেকেই তিনি দলের নির্বাচনী কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন।
গত ৩ ডিসেম্বর দলের মহাসচিব পদ থেকে রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গাকে ওই পদে বসানো হয়।
এর পাঁচ দিন পর, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে দলের সকল সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের জন্য রুহুল আমিন হাওলাদারকে চেয়ারম্যানের বিশেষ সহকারী ও দলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড বানানো হয়।
গত ১০ ডিসেম্বর এরশাদের সঙ্গে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ও তার এপিএস মঞ্জুরুল ইসলাম চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যান।
জাতীয় পার্টি প্রধান এরশাদ ঢাকা-১৭ এবং রংপুর-৩ আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী আসনের জাতীয় পার্টির এক প্রার্থী ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা এখন অভিভাবকহীন অবস্থায় রয়েছি, কারণ চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। আমাদের বেশিরভাগ বড় নেতা তাদের নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। যদিও রুহুল আমিন হাওলাদারের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করার কথা রয়েছে, তবে তিনি সক্রিয় নন। এখন নির্বাচনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমরা দলের উচ্চ পর্যায় থেকে কোনো নির্দেশনা পাচ্ছি না।’
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সাল চিশতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় এরশাদ দেশে ফিরছেন। তিনি ঢাকা-১৭ আসনে নির্বাচনী প্রচারণা চালাবেন, তবে শারীরিক অবস্থার কারণে হয়তো রংপুর যেতে পারবেন না।
তিনি আরও বলেন, সারা দেশে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ ও হতাশা রয়েছে, কারণ তাদের চেয়ারম্যান এখনও তার পক্ষে অথবা অন্য কোনো প্রার্থীর পক্ষে কোনো নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারেননি। এটি সত্য যে, চেয়ারম্যান দেশে থাকলে আমাদের নেতা-কর্মীরা আরও উজ্জীবিত থাকতেন।
চিশতি বলেন, বাড়ি ফেরার পর এরশাদ দলের নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এবং তাদের মন থেকে সকল প্রকার উদ্বেগ ও হতাশা দূর করবেন।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব.) খালেদ আক্তার বলেন, নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই তাদের চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে দলের নেতাকর্মীরা কিছুটা উদ্বিগ্ন।
‘দলীয় প্রধানের অসুস্থতা এবং নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে না পারার বিষয়টি নেতা-কর্মীদের জন্য কিছুটা উদ্বেগের ব্যাপার। তবে তারা হতাশ নন,’ যোগ করেন তিনি।
খালেদ আরও বলেন, শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় এরশাদ দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না। দুটি আসন থেকে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও খুব বেশি প্রচারণা চালাতে পারবেন না।
তিনি বলেন, দলের চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে তাদের সিনিয়র নেতারা তার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় দলের অন্যান্য প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য তাদের নেতা- কর্মীরা একসাথে কঠোর পরিশ্রম করছেন।
লালমনিরহাট-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী খালেদ বলেন, মহাজোটের প্রার্থী না হলেও তিনি ভোটারদের কাছ থেকে বিপুল সাড়া পাচ্ছেন।
জাতীয় পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের সময়ে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে এরশাদ বিদেশে থাকার কারণে তাদের দলের নেতাকর্মীরা কিছুটা হতাশ করে পড়েছেন। তবে আমার নির্বাচনী এলাকায় এটির কোনো প্রভাব নেই, কারণ আমি মহাজোটের প্রার্থী।’
তিনি বলেন, তিনি তার এলাকায় দলের নেতা-কর্মী এবং তাদের জোটের শরিকদের কাছ থেকেও সমর্থন পাচ্ছেন।
রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া আশা করছেন, বুধবার তাদের চেয়ারম্যান দেশে ফেরার পর দলের নেতা-কর্মীরা পুনরুজ্জীবিত হবেন।
রংপুরের সিটি মেয়র ও মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রংপুর-৩ আসনে এরশাদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।
মোস্তফা বলেন, ‘তারা এরশাদের পক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং ভোটারদের কাছ থেকে বিপুল সাড়া পাচ্ছেন। যদিও স্যার (এরশাদ) ভোটারদের কাছে যেতে পারছেন না, তবে এতে কোনো প্রভাব পড়ছে না, কারণ সবাই জানে যে তিনি অসুস্থ। রংপুরের মানুষ তাকে অনেক ভালোবাসে। এমনকি অতীতেও তিনি জেল থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন।’